বিশ্বাস করেছে সেও দখিনা হাওয়ায়

আসলে যে ছেলেটা মরে গিয়েছিলো কিছুদিন আগে
জবানবন্দী তার হয় নাই লেখা
বিশ্বাস করেছে সেও দখিনা হাওয়ায়
মেনে নিয়েছিলো, এভাবেও বেঁচে থাকা যায়
প্রতি দিন, অষ্ট প্রহর
এবং রাতের শেষে ভোর, প্রতি দিন নিয়মিত আসে
অটুট বিশ্বাস ছিলো তার দখিনা বাতাসে

তবুও সে মরেছিল
মরেছিল, মরে যেতে হয়
মরে যাওয়া, অর্থাৎ জীবনের অপচয় করেছিল
সুতরাং হিসেবি ছিলো না বলা চলে

তলে তলে কী যে ভেবেছিলো সে খবর নেওয়া যায় যদি
ধরা যাক, স্বীকারোক্তি, মৃত্যুকালীন
মণিবন্ধে ছুরি চালানোর আগে, উদাসীন, কিছু বাক্যালাপ
দুপুরে স্নানের ঘাটে ধীরে ধীরে মুছে যাওয়া, পদচিহ্ন, ছাপ
সে রকমই উদ্বায়ী শেষের স্তবক
আসুন বন্ধুগণ, পর্দা উন্মোচিত হোক
ওর শেষ কথাগুলো আমরা জানতে চাই সংগত আগ্রহে -

- ওহে, মরতে চললে বুঝি? আত্মহত্যা করছো সজ্ঞানে?
- মানে?
- মানে... ঐ প্ররোচনা যাকে বলে... কোন কেচ্ছা... হৃদয়ঘটিত...
- না না সে রকম কিছু নয়, পুরোপুরি ইচ্ছাকৃত...
- মরতে ইচ্ছা হলো, বেশ বেশ। তা কারো কথা মনে পড়ছে
শুনেছি মরবার আগে প্রিয়জনেদের কথা মনে পড়ে,
পিতা-মাতা, ভাই-বোন
- মনে পড়ে, সত্যিই, ঐ সব ভেবেছি অনেকক্ষণ।
জানেন, ছোটবেলা সে বড় অবাক সময় ছিল যেন।
আচ্ছা, বলুন তো হঠাৎ এসব ভাবছি কেন? ছুরিটা
নিতেই হাতে মনে পড়লো গরমের ছুটি, বিকেলের
ফুটবল খেলা, প্যাচপ্যাচে কাদা মাঠ, হুটোপুটি। অনেকের
মুখ পরপর ভেসে এলো, অথচ তাদের নাম উধাও
হয়েছে বেমালুম...
- তারপর তারপর
- তারপর মনে হলো, শীতকাল, লেপমুড়ি, অতলান্ত ঘুম...
শীতের রাত্রিগুলো দেখেছেন, কি রকম রহস্যময়
রাস্তার ধারে ধারে ল্যাম্পপোস্ট, কুয়াশার জাফরিতে
ঈষৎ জড়ানো রাতবাতি, মাতালের টলমল পায়ে
হেঁটে গেছে ট্রামের লাইন। রাত যেন স্বৈরাচারী রাজা
গোবেচারা দিন, যৌবনেই পেয়েছে তার মৃত্যুপরোয়ানা।
- এ সব কথা তো ভায়া সকলেরই জানা, এ সব খায়না
পাবলিক। কিছু দুঃখের কথা বলো, এমন ঘটনা
যেটা আত্মহত্যা বিষয়ে প্রাসঙ্গিক।
- আত্মহত্যা... ঠিক... আত্মহত্যা বটে... আচ্ছা, জীবনে কি
এমন ঘটনা ঘটে যার ফলে নিজে হাতে খুন করে ফেলা
যায় নিজেকেই? উত্তর জানা নেই...
- তবে যে মরতে চাও, সেটা কি নেহাতই অকারণ?
- ধরে নিন, ভালো নেই মন...
- এ তো অজুহাত
- ধরে নিন, কাল সারা রাত একটানা ডেকে গেছে
পাঁশুটে বেড়াল। সারা রাত, কাল, একফোঁটা ঘুম নেই
বালিশে ঘুমলো শুধু তেলচিটে আদিখ্যেতা এসে।
কাল রাতে আকাশের দিকে তাকালেই দেখতেন
তেকোণা একটা মেঘ ক্রমাগত ভেসে যাচ্ছে চাঁদটাকে ঘিরে...
- ব্যাস! আর কিছু নয়?
- আরও আছে, যদিও বিশদে বলি অতখানি বাঁচেনি সময়
ইদানীং নিছক ছায়াও দেখি আমাকে ডাকছে ভালোনামে।
শহুরে শব্দগুলো কখনো কি থামে? গ্রহণের রাতে কোথাও কি
নেমে আসে প্রকৃত আঁধার? ঐ যে মোমের আলো, কী দরকার
ঐ ভাবে কেঁপে কেঁপে উঠে গলে যাওয়া... ঐ অন্ধকারে
নিজেকেই দেখে মনে হলো মরীচিকা...

ফেলে দেওয়া যাক যবনিকা। হিংসা - রক্তপাত, এসব পছন্দ
করি না আমরা, খুবই স্বাভাবিক। তবুও ছেলেটা মরলো
মরছেও দৈনিক, যদিও বিশ্বাস করতো দখিনা হাওয়ায়।
যদিও বিশ্বাস করতো এভাবেও বেঁচে থাকা যায়,
অষ্টপ্রহর... প্রতিদিন...

বন্ধুগণ...ধরে নেওয়া যাক এই তার স্বীকারোক্তি... মৃত্যুকালীন...

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

পরস্ত্রীকে

বড় একা একা ছুঁয়ে আছে

সমস্ত লেখা হলে