পোস্টগুলি

পরস্ত্রীকে

 (১)  জানলাটা আজ মেঘ থইথই, একটা শালিখ মন দিয়ে খুব তাকাচ্ছিল কাচের দিকে কাচও তেমন, এক-দু ফোঁটা জল ছুঁলো যেই চিঠির বয়ান বদলে দিল – পরস্ত্রীকে “সীমন্তিনী, সম্ভাষণে আর কী লিখি সকাল সকাল রোদ্দুর দাও চায়ের কাপে কড়া লিকার, ফর্সা আকাশ মিশিয়ে তাতে মেঘলা এবার বাতিল করো, মনখারাপে মুখ ধুইনি, কলের জলের দাঁত উঠেছে কামড়ে দিল এমন জোরে ঘুমের চোখে এখনো লাল, নিন্দুকে কী ভাববে বলো সবাই জানে আমার স্বভাব চরিত্রকে সীমন্তিনী, রোদ্দুর দাও, হালকা চুমুক চায়ের কাপেই ঠোঁট ছোঁয়াব, দিব্যি গেলে মেঘ যদিও কুমন্ত্রণা দিচ্ছে, তা দিক শুনব সে সব, আমি কি আর তেমনি ছেলে” লম্বা চিঠি, কী যেন হয় এক শালিখে? জানলা জুড়ে কাটছে কি মেঘ? একটু ফিকে? (২) “শীতের মধ্যে পড়ল হঠাৎ এমন গরম, চোত-বোশেখে যেমনটা হয়, গেঞ্জী সোঁদা, ঘাম চাটছে জামার কলার। রোদ্দুর দাও বলব না আর, সত্যি বলছি, ঘাট হয়েছে আর তাছাড়া আমার কাছে অনেক কথা – তোমায় বলার। তেইশ থেকে ছাব্বিশ তো লম্বা ছুটি। কোথাও যাবে? ছুটির কথায় পড়ল মনে, তোমার বিয়ে, ফাল্গুনে কী? শহর ছেড়ে পালিয়েছিলাম, মুখ লুকিয়ে, শীত ছিল খুব। মাস মনে নেই। খুঁজলে পাব যদিও জানি, ডাইরি দেখি। শহর ছেড়ে পালিয়েছিলাম। শহর ছাড়

স্কটিশবালকদের সাথে

এ সময়ে কথা বলে লোকে। জানলায় চোখ রেখে , পর্দার ফাঁক গলে উত্তুরে হাওয়া সন্ধের হাত ধরে চুপিচুপি ঘরে এসে ঢোকে। ঘেঁষাঘেঁষি বসে থাকে চীনেমাটি , চায়ের পেয়ালা। ঘড়িতে সময় বাজে , রোমহর্ষক কথামালা কুয়াশায় মিশে যায় ফুলদানি , রাশভারী কেতাবের তাক । এ সময়ে শীত নেমে আসে। আচমকা ঘষা লেগে জ্বলে ওঠে যাদুই চিরাগ , অবগুন্ঠন খসে বেলোয়াড়ি রং লাগে শাদাকালো লেখা ইতিহাসে। যা হলে ভালোই হত সেই সব মায়াবী আতরে স্কুলদিন , কলেজবছর , ফুলকির ডানা মেলে ওড়ে। ছড়িয়ে ছিটিয়ে যায় অঙ্গার , ছাইমাখা আলো । উপসংহার ভেসে ওঠে - ওরা আজ আগুন পোহালো।

বেথুনবালিকা, স্কটিশবালক

যে সব দুপুর বৃষ্টির আবদারে কলকাতাতে খেলছে লুকোচুরি , তেমন কোন দুপুর খুঁজে পেয়ে স্কটিশবালক , অফিস , হুড়োহুড়ি ভাসিয়ে দিল বাগবাজারের ঘাটে। তারপরে সে গাড়লো কোথায় ঘাঁটি ফিরবে , না কি গহন নিরুদ্দেশের রাস্তাতে সে করবে হাঁটাহাঁটি ? চিঠির পাতায় নৌকো বানায় বেথুনবালিকাটি..

ছোটগল্প

ছোটগল্প -১  আশ্চর্য জানলা এক , হরিণের মতো ছটফটে। তার কোলে কফিকাপে মেয়েটির ছায়া থিতিয়ে পড়েছে।  ধীরগামী গাড়ি চড়ে কিছু লোক পার হ ’ ল এমনই গোধূলি। ছবিতে কী যেন নেই , এই ভেবে শিল্পীর তুলি                                             খানিক থমকেছিল। ক্যানভাস , পুরোনো ইজেল। রঙের টিউব কিছু আশেপাশে রয়েছে ছড়ানো। চারকোল , লিনসীড তেল। মেয়েটির মুখোমুখি শিল্পী দাঁড়ায় সেই                                  ছটফটে জানলার পাশে। কফিকাপে দু ’ জনের ছায়া। শহরে সন্ধে নেমে আসে। ছোটগল্প ২ সে শোনে গাছের কান্না , পাথরের তামাম উইল। লিপিবদ্ধ করে রাখে সব। আকাঁড়া আদর , ঘাম , বিকেলের কিছু গরমিল আর যা যা চোখে পড়েছিল দীর্ঘ যাত্রাপথে। এখন সে খাতা বন্ধ করে বসে আছে খাদের কিনারে।  হাওয়ার দাপটে এলোমেলো হয়ে আছে চুল।  জমকালো রাত্রিটি মুঠোমুঠো তারা দিয়ে বোনা। আজকে চাঁদের ছুটি। কাছেই সমুদ্র আছে ? বাতাস ঈষৎ যেন নোনা। খাতাটি রেখেছে পাশে। এখনও শেষের পাতা খালি। অন্য কেউ ভরে দেবে শেষের খবরটুকু তাতে। ভ্রমণের সাবেক পাঁচালি।

অনুবাদে

অনুবাদে নিভেছে জোনাকি তাকে আমি কখনও বা আলো বলে ডাকি কখনও আঁধার বলি , আর বলি , ‘ স্থির হতে শেখো শিখে নাও পাথরের গুণাগুণ , শান্ত , শীতল হও দেখো , শ্যাওলা কেমন ঘিরে ধরবে তোমাকে ধীরে ধীরে ’ ‘ আর তুমি ’ , সে জানতে চায় , ‘ আমিও তো একদিন ফিরে আসবোই রোজকার মাধুকরী ছেড়ে ,     আমারও বয়স বেড়ে আগাছায় মিশে যাবে যতটা সবুজ আছে পলি পড়ে বুজে যাবে নদীখাত দ্যাখো এই বাড়িয়েছি হাত আমাকে গোপন করে রাখো ’ সে বলেছে , ‘ যাবে কেন ? থাকো ’

একটি বানানো গল্প

[ ব্যাকড্রপে যেটুকু সময় এলোমেলো তাকে কুড়িয়ে নেবার চেষ্টায় যে ছেলেটি একঘেয়ে পা বাড়িয়ে দক্ষিণ থেকে হেঁটে এলো এই গল্প ওকে নিয়েও বটে। মঞ্চের অন্য দিকে একটি মেয়ে ঘড়ি দেখে , শাড়ির আঁচল আনকোরা জড়ায় আঙুলে , এ গল্প তারও। এবং অন্য কয়েকজন , ছেলেটির বন্ধু , মেয়েটির বান্ধবী , দু ' জনেরই বাবা ও মায়েরা , কলেজের নোটস ঠাসা খাতা , জানলার ওপাশের দোতলা অবয়ব , বিগত বছর বারো – সকলেই কুশীলব এই গল্পের। বাকিরা এখন যদিও মঞ্চে নেই , তারাও আসতে পারে সময় এলেই। থার্ড বেল পড়ে গেলে পর্দা উঠবে , তার আগে ওরা দু ' জনেই খানিক দ্বিমাত্রিক , খানিক আবছা হয়ে আছে। থার্ড বেল বেজে ওঠে। পর্দায় সড়সড় টান।] মেয়েটি : বড় দেরি করে এলে। ছেলেটি : দেরি হল। অথচ বাড়ির থেকে বেরোলাম তখনও বুকপকেটে অনেক সময়। তখন যায়নি বোঝা , এখানে পৌঁছে দেখি সময়ের সাথে ছিল ইঁদুরের পাশাপাশি বাস। খানিকটা খেয়েছে তার ঢের বেশি ছড়িয়েছে এদিক সেদিক। মেয়েটি : অজুহাতে তোমাকে হারাতে পারে এমন মানুষ খুঁজে পেলে আরও একবার আমি হতে চাই দু ' হাজার সাল। আরও একবার সেই কলকাতা - যখন প্রেমের নাম গোপনীয় কলমে কাগজে। যে সময় কলকাতা ভুলেও ভাবেনি কোনও কবিতায়

বিশ্বাস করেছে সেও দখিনা হাওয়ায়

আসলে যে ছেলেটা মরে গিয়েছিলো কিছুদিন আগে জবানবন্দী তার হয় নাই লেখা বিশ্বাস করেছে সেও দখিনা হাওয়ায় মেনে নিয়েছিলো , এভাবেও বেঁচে থাকা যায় প্রতি দিন , অষ্ট প্রহর এবং রাতের শেষে ভোর , প্রতি দিন নিয়মিত আসে অটুট বিশ্বাস ছিলো তার – দখিনা বাতাসে তবুও সে মরেছিল মরেছিল , মরে যেতে হয় মরে যাওয়া , অর্থাৎ জীবনের অপচয় করেছিল সুতরাং হিসেবি ছিলো না বলা চলে তলে তলে কী যে ভেবেছিলো সে খবর নেওয়া যায় যদি ধরা যাক , স্বীকারোক্তি , মৃত্যুকালীন মণিবন্ধে ছুরি চালানোর আগে , উদাসীন , কিছু বাক্যালাপ দুপুরে স্নানের ঘাটে ধীরে ধীরে মুছে যাওয়া , পদচিহ্ন , ছাপ সে রকমই উদ্বায়ী শেষের স্তবক আসুন বন্ধুগণ , পর্দা উন্মোচিত হোক ওর শেষ কথাগুলো আমরা জানতে চাই সংগত আগ্রহে - - ওহে , মরতে চললে বুঝি ? আত্মহত্যা করছো সজ্ঞানে ? - মানে ? - মানে... ঐ প্ররোচনা যাকে বলে... কোন কেচ্ছা... হৃদয়ঘটিত... - না না সে রকম কিছু নয় , পুরোপুরি ইচ্ছাকৃত... - মরতে ইচ্ছা হলো , বেশ বেশ। তা কারো কথা মনে পড়ছে শুনেছি মরবার আগে প্রিয়জনেদের কথা মনে পড়ে , পিতা-মাতা , ভাই-বোন - মনে পড়ে , সত্যিই , ঐ সব ভেব